মতিহার বার্তা ডেস্ক: সম্প্রতি রাজধানীতে গৃহকর্মী সেজে প্রতারণার ঘটনা প্রায় ঘটেছে। মূলত অভিজাত এলাকা টার্গেট করে এসব প্রতারক চক্র তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাই গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
রবিবার (৪ অক্টোবর) ইডেন মহিলা কলেজের সাবকে অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এসব কথা বলেন। হত্যার দায়ে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো গৃহকর্মী রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না ও রুমা ওরফে রেশমা।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে গৃহকর্মী সেজে প্রতারণার ঘটনা প্রায় ঘটেছে। তারা বিভিন্ন বাসা-মেসে কাজ করার নামে সুযোগ বুঝে কৌশলে টাকা-পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি চুরি এবং পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান ও হত্যা করে মালামাল নিয়ে যায়।
আদালত তার রায়ে পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, গৃহকর্মী রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না ও রুমা ওরফে রেশমার মতো আর কেউ যেন ভুল পথে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে গৃহকর্তা ও গৃহকর্তীকে সতর্ক থাকতে হবে। আদালত যে সতর্কবার্তা প্রদান করেন তা হলো:
১. গৃহকর্মী নিয়োগের তারিখ থেকে ৯০ দিন সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে কোনও চুরি ডাকাতি না করতে পারে।
২. গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে তাদের জাতির পরিচয়পত্র, ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত রাখতে হবে এবং নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে।
৩. বাসার মূল গেটে সিসি ক্যামেরা না থাকলে অবশ্যই সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে।
৪.কোনও গৃহকর্মী যদি অন্য কোনও গৃহকর্মীদের কাজ দেয় তাহলে উভয়ের জীবনবৃত্তান্ত, ছবি সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে।
৫. গৃহকর্মী দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্যই লাইসেন্স থাকতে হবে।
এ সময় আদালত আরও বলেন, অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ছিলেন একজন নারী শিক্ষার অগ্রদূত। ইডেন মহিলা কলেজের আদর্শবান ও ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ এবং একজন আদর্শবান দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের শ্রদ্ধা ভাজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, আসামিরা অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে হত্যা করে তার স্বামী, কন্যা ও পুত্রকে স্নেহ-মমতা থেকে চিরতরে বঞ্চিত করে স্থবির করে দেয় তাদের সাজানো সংসার। তার অবসরকালীন জীবনে সমাজ তথা সংসারকে অনেক কিছু দেওয়ার সুযোগ ছিল। এ হত্যার ঘটনায় আসামিরা কোনওভাবে আদালতের নিকট থেকে অনুকম্পা পেতে পারে না।
এদিন সকালে এ দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে হাজির করা হয়। বিচারক এজলাসে ১টা আসেন। এরপরেই রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শেষ হয় দুপুর ১ টা ৫৫ মিনিটে। রায়ে তাদের দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণা শেষে আসামিদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় খুন হন মাহফুজা চৌধুরী। এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন ইডেন কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ। ওই ঘটনায় নিহতের স্বামী ইসমাত কাদির গামা নিউ মার্কেট থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই গৃহকর্মী স্বপ্না (৩৬) ও রেশমাসহ (৩০) তিনজনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে স্বপ্না ও রেশমা এবং দুই গৃহকর্মীর জোগানদাতা রুনু বেগম ওরফে রাকিবের মাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয় পুলিশ। স্বপ্না এবং রেশমা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তারা দুজনই কারাগারে। বাংলা ট্রিবিউন
মতিহার বার্তা ডট কম: ০৪ অক্টোবর ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.